"লাল-লাল নীল-নীল রঙ্গিন আলোর শহরের ইতিকথা"

avatar
(Edited)

"ঢাকা শহর অ্যাইসা, আমার পরাণ জুরাইছে, লাল-লাল নীল-নীল বাত্তি দেইখ্যা আমার পরাণ জুরাইছে।" সুখে থাকতে ভূতে কিলায় এই প্রবাদবাক্যকে বাস্তবতায় রূপদানকল্পে গ্রামের অতি সাদাসিধা জৈনিক ব্যক্তি যখন অর্থ নামের সুখের পায়রাটাকে নিজের খাঁচায় বন্ধিকল্পে ঢাকা শহরে জীবন তরী ভিড়াইয়া দেয়, প্রথমাবস্থায় লাল-লাল নীল-নীল বাত্তির মোহ তাদের হৃদয়কে পূলকিত করে। পূলকিত মনখানা যখন গুন গুনিয়ে গান গাইতে থাকে "ঢাকা শহর অ্যাইসা, আমার পরাণ জুরাইছে, লাল-লাল নীল-নীল বাত্তি দেইখ্যা আমার পরাণ জুরাইছে।" ঠিক তখনি মনে প্রশ্নের সঞ্চার হয় এই শহর কি কখনো ঘুমায় না, রাতের আকাশের তারা গুলোর তো শুধু একটাই রং, ঢাকার বুক জুড়ে রাত্রিবেলা বহু রংঙ্গের তারা ঝিক মিক করে। এই সব তারা রাতের আকাশের চেয়েও বড়ই সৌন্দর্য। তখন অবধি সেই জৈনিক ব্যক্তি বুঝিতে নাহি পারে, কত যে করুন বাস্তবতার ইতিকথা সাজানো আছে, এই শহরের প্রতিটি ইটের গাথুঁনির থরে থরে।

IMG_20200728_011723.jpg

গ্রামের চাচাতো ভাইয়ের ভায়রা ভাই থাকে ঢাকার উত্তর বাড্ডায়, সম্পর্ক তেমন গভীর নয়, উপায়হীন তাই আশ্রয়ের সাহায্য কামনা করে, নিজের পরিবারকে অার্থিক স্বাচ্ছলতা দেবার জন্য আজ ঢাকায় আসা জৈনিক ব্যক্তির। লোক মূখে শুনেছিল "ঢাকায় নাকি, টাকা ওড়ে"। লাখ-লাখ মানুষ ধরতে পারলে আমি পারমু না কেন, এই আত্মবিশ্বাসটা আজ তাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। গ্রামের অনেক পোলা পাইন, গার্মেন্টস এ চাকরী করে, ওটা আবার কোন চাকরী হলো নাকি, সারাদিন এক জায়গায় বইসা কাপড় সিলানো। তাহলে ঢাকা শহর দেখমু কেমন করি। তাই সে এমন একটা পেশা খোঁজে আছেন যেটাতে ঢাকা শহর ঘুইরা দেখতে পারবেন। দুই দিন ঢাকা শহরে ঘোড়া ঘুড়ি করার পর জৈনিক ব্যক্তির মাথায় একটা জব্বর আইডিয়া চলে আসে। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সে সিএনজি ড্রাইভার হবে।

IMG_20200728_011511.jpg

একবার যখন ভাবছি সিএনজি রিক্সার পাইলট হমু, আর কিছু ভাবার সময় নাই। চাচাতো ভাইয়ের ভায়রার সহযোগিতায় এক দালল খঁজে পাওয়া গেল, যে তাকে ড্রাইভারি এর সাথে সাথে সিএনজি ভাড়ায় পাইয়ে দেবে, কিন্তু কিছু অগ্রীম টাকা জমা দিতে হবে, পাঁচ থেকে সাত হাজার দিলেই হবে। টাকা কোথায় পাই, কোথায় পাই! বড়ই চিন্তার বিষয়, হঠাৎ করে মনে হলো বাসায় তো একটা কালো পাঁটা আছে, ওটা বেঁচলে অনায়াসে আঁট নয় হাজার টাকা হয়ে যাবে।

IMG_20200728_011856.jpg

IMG_20200728_011552.jpg

সম্ভাব্য সিএনজির পাইলট হবার উপকারিতা সমূহ বউকে উপন্যাস রূপে ব্যাখা করার পর, বউকে রাজি করিয়ে পাঁটা ছাগল খানা বেঁটে নয় হাজার টাকা পেল। তার দুই হাজার বাড়িতে রাখতে বলে বাকি সাত হাজার বিকাশ কাকুর মাধ্যমে বউকে বলল ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে। বিকাশ কাকু খুব ফাস্ট পাঁচ মিনিটে টাকা ঢাকায় নিয়ে আসলো। অতঃপর দালালকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে এক দিন, দুই দিন, তিন দিন অপেক্ষা করতে থাকে দালালের জন্য। চতুর্থ দিন জানতে পারে দালাল মহাশয় আরো অনেকের টাকা নিয়ে চম্পট হয়েছেন।

IMG_20200728_011706.jpg

IMG_20200728_011856.jpg

ঢাকা শহরের চরম বাস্তবতার লাল রঙ্গের ক্ষুদ্রতম কিরনের ঝলক আজ জৈনিক ব্যক্তিটি উপলব্ধি করতে পারল। আরে ভাই ব্যাপার না, হাতের পাঁচ আঙ্গুল কি সমান হয়, ভায়রা ভাইয়ের এমন নীতি বাক্য হৃদয় ছুয়ে গেল। ভায়রা ভাই নীতি বাক্য না ঝেড়ে করবেন বাই কি, ওই পাঁচ হাজারের দুই হাজারের ভাগিদার যে তিনি ছিলেন। উৎসাহ দিলেন এবার তিনি নিজেই কোন সিএনজি গ্যারেজের মালিকের সাথে কথা বলে তার সবকিছু ব্যবস্থা করে দিবেন। যতিও পথটা তার অনেক আগেই জানা। দালালতো শুধু একটা পরিকল্পনার অংশ বিশেষ ছিল মাত্র।

IMG_20200728_011706.jpg

IMG_20200728_011609.jpg

স্ব-শরীরে সিএনজি গ্যারেজে ভায়রা ভাইয়ের সাথে উপস্থিত হয়ে, মালিক পক্ষের সাথে ফাইনাল কথোপকথনে আত্মবিশ্বাস তাহার যখন আকাশচুম্বী, ঠিক তখনি ঘীয়ের ভিতর পানি ঢেলে দিলেন, মালিক মশাই। পাইলট হবার প্রশিক্ষন তিনি ফ্রিতে পাবেন, লাইসেন্স এবং জামানত বাবাদ ত্রিশ হাজার টাকা দাবী করে।

এখানেও ভায়রা ভাইয়ের বিনা পুঁজিতে পাঁচ হাজার টাকার ব্যবসা, তাই বাসায় ফিরে টাকা জোগাড় করার বিভিন্ন উপায় এবং সিএনজি পাইলটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ব্যাখা করে, জৈনিক ব্যক্তিকে পটানোর কোন প্রকার ত্রুটি রাখলেন না। বেচার সহজ সরল ঢাকাইয়া প্যাঁচ বুঝবার না পাইরা পইট্যা গেছে গাঁ। ভায়রা ভাইয়ের দেয়া মোক্ষম আইডিয়া,গ্রামীন ব্যাংক থেকে চল্লিশ হাজার টাকা লোন গ্রহন করে ছত্রিশ হাজার টাকা বিকাশ কাকুর মাধ্যমে নিয়ে এসে ত্রিশ হাজার গ্যারেজের মালিককে দিয়ে। পাইলট হবার প্রশিক্ষন গ্রহন করে, একমাসে লাইসেন্স সহ সিএনজি পাইলট বনে যান।

IMG_20200728_011636.jpg

IMG_20200728_011810.jpg

দৈনিক পাঁচশতটাকা জমাদান, রাস্তায় চলাকালিন মেরামতের খরচ বহন,জ্বালানি খরচ নিজের, এবং গাড়ীর কোন ক্ষতি ও হারিয়ে গেলে ক্ষতিপূরন দেয়ার শর্তসাপেক্ষে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে, ঢাকা শহরের রাজপথে সিএনজি ড্রাইভার হিসাবে যাত্রা শুরু করলেন।

সম্ভাবনার নীল বাত্তি আজ তাহার চোঁখে সুখের স্বপ্নের এক নতুন বীজ বপন করে গেল। বাড্ডার লিংক রোড থেকে শুরু করে, শাহাবাগ, মিরপুর, গাবতলি, বাবু বাজার, টিটাগাং রোড়, নীল রঙ্গের ড্রেস পড়ে ফুল পিকাপে যাত্রি সেবা দিয়ে ভালোই উপার্জন হচ্ছে। দশ পনের যেতে না যেতেই, হঠাৎ এক দুপুর বেলা, ট্রাফিক সার্জন বিনা অপরাধে মহাখালীর আমতলীর ফ্লাই অভারের নিচে পাকরাও করে জরিমানা বাবদ কয়েক দিনের জমানো সব টাকা খসিয়ে নিলেন। দূর্নীতি এবং অমানবিকতার উজ্জ্বল এক লাল-লাল বাত্তি দেখলেন আজ জৈনিক ব্যক্তিটি।

IMG_20200728_011649.jpg

IMG_20200728_011911.jpg

এভাবে ছয় মাস কেটে যায়, ঠিক টাক চলছে সব কিছু। হঠাৎ এক রাতে বাসায় ফেরার পথে, দুই যুবকের "এই সিএনজি" ডাকে সাড়া দিয়ে, দুর্গম বেরীবাধের রাস্তা ধরে আশুলিয়া যাবার প্রস্তাবে রাজি হলেন। যখন তারা বেরীবাঁধে পৌছায়, এক যুবকের প্রাকৃতিক ডাকে সারা দেবার জন্য, রাস্তার পাশে সিএনজি দাড় করায়, সিএনজি থেকে নেমে দুই যুবক তাকে এলোপাথারী মারধর শুরু করে এবং এক পর্যায়ে ধারালো ছুরির আঘাতে তাকে আহত করে কার সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। সে বাধা দিতে পারে নাই, কারন সে অঞ্জান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

যখন কার জ্ঞান ফেরে সে নিজকে হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করেন এবং পাশে তার স্ত্রীকে দেখতে পান। কয়েক দিন পর সুস্থ্য হয়ে, সুস্থ বিচারের দাবিতে যখন বাড্ডা থানায় মামলা করতে গেলেন, তখন দেখতে পেলেন, ওই থানায় আগে থেকেই তার নামে সিএনজি চুরির মামলা করে রেখেছেন, গ্যারেজ মালিক। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তিন মাস পর সিএনজি এর জরিমানা বাবদ গ্রামের বাড়ীতে নিজেদের শেষ সম্বল বাড়ি ভিটা এবং আবাদি জমি বিক্রি করে তিন লক্ষ টাকা গ্যারেজ মালিককে প্রদান করে, কারাবাস থেকে মুক্ত হন।

IMG_20200724_172135.jpg

ভিটা মাটি হাড়িয়ে নিজের পুরো পরিবারকে নিয়ে আসেন আবার সেই চির চেনা ঢাকায়। তাহার অার সমগ্র ঢাকা শহর ঘুরে লাল নীল বাত্তি দেখার কোন শখ নাই। সিএনজি পাইলট থেকে আজ সে রিক্সাচালক। জীবনের নীল বাত্তি অনেক অাগেই নিভে গেছে, আজ রাতের শহরে যখন পিছনের সিটে মাতাল কোন ধন্যান্ট ব্যক্তিকে প্যাডেল চালিয়ে সম্মূখপানে রিক্সা নিয়ে অগ্রসর হয়, রাতের লাল এবং নীল আলো মিলে মিশে কেমন জানি ধূসর বর্ণের লাগে, সেই জৈনিক ব্যক্তির কাছে।

আমি আমার এই লেখাটা আমাদের সকলের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাভাজন দাদা @azircon দাদাকে উৎসর্গ করছি। (আমাকে সুন্দর একটি গল্পের পথ দেখানোর জন্য)।

Thanks for being with me.

I'm @shadonchandra a proud Member of @bdcommunity.

Find Me on Twitter, Because I used To Share Beautiful Photography every day on My Twitter Account.

Find Me On Facebook, Because I used To Share Some Beautiful Thought Of Life in my Facebook Profile.

Have a very nice Day...



0
0
0.000
7 comments
avatar

There is a book by Bimal Mitra; Kori Diye Kinlam. Its a 1200 page saga, so think twice before considering to read it. One of the critics of that book once said, it is 1200 pages because Bimal Mitra says the same thing over and over again. In response to that Bimal babu said; a style that he was trying to portray in that book is like Hindusthani Classical Music, where in both during Aalap and during Bistarr and even in Taan, you repeat the notes over and over, it adds to the experience. He did the same thing earlier in Shaheb Bibi Golam as well, but more so in Kori Diye Kinlam. When I read this post, the first paragraph remind me of that. You probably didn't write it consciously, because that would be remarkable. But the style worked nonetheless. Well done.

0
0
0.000
avatar

Thanks a lot, Dada. Really I have no idea about the writing Style of Bimal mitra, because I never read Kori diye Kinal and Saheb bibi Golam, It's my own Style. I think I should read out those book. Really very appriciating Dada.

0
0
0.000
avatar

নির্মম ও হৃদয়বিদারক গল্প

0
0
0.000
avatar

This post earned a total payout of 16.660$ and 8.330$ worth of author reward that was liquified using @likwid.
Learn more.

0
0
0.000