প্রতিক্ষার প্রহর

ক্যাম্পাসের রাস্তা দিয়ে হাটছি।পরিচিত কাওকে দেখতেও পাচ্ছি নাহ। জসিম মামার চায়ের দোকানের সামনে চলে আসলাম।একা চা খেতেও ভালো লাগেনা। পাশে বন্ধু-বান্ধব থাকলে একসাথে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা দেওয়ার যে আনন্দ তা কি ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে বসে পাওয়া যাবে সেই অংক কষতে কষতে দূরে রাশেদ কে দেখতে পেলাম। ডাক দিলাম,এই রাশেদ চা খাবি? সে একটা হাসি দিয়ে বল্লো,চা কে না করলে পাপ হবে,চল বসি। দুই বন্ধু গল্প-গুজব করতে করতে চা খাওয়া শেষ করলাম। আমি বল্লাম ২০ টাকা দে বিল দিবো। রাশেদ টাকা দিলো আমি চায়ের বিল মিটিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম আবার দুজন হাটা শুরু করলাম।টাকা চাওয়ার বিষয়টায় সে মোটেও অবাক হয় নাই, কারণ সে জানে আমি প্রায়ই তার থেকে এইভাবে খাবারের বিল আদায় করি।

হাটতে হাটতে শহিদ মিনারের কাছে চলে আসলাম দুই জন। দিনের আলো ও যেন ফুরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে আর তার সঙ্গে উল্টো তালে তালে ক্যাম্পাসের মধ্যে আড্ডার আসর গুলো ও যেন জমে উঠছে। চারদিকে গানের আসর,আড্ডার পসরা,নানাবিদ গবেষণা চলছে যে চলছে।এর সমাপ্তি রাতের গভীরতার উপর নির্ভরশীল। একে একে বন্ধুমহলের সকলের একসাথে বসে প্রতিদিনকার আড্ডার হিসাব টা চুকিয়ে নিলাম।সময়গুলো যেন খুব দ্রুত ই চলে যাচ্ছে সকলের সাথে।এরই মধ্যে একটা ট্যুর প্লেন হয়ে গেল।অনেকদিন যাবত কোথাও যাওয়া হয়নি তাই সবাই মিলে দূরে কোথাও পাহাড়ের সাথে দেখা করার আলোচনা চলছে।সীতাকুণ্ডে যাওয়ার প্লেনিং চলছে।মাস শেষের একটা ছোট বন্ধের অপেক্ষায় সবকিছু গুছিয়ে নিলাম আমরা।ঘড়িতে রাত ১১ টা বেজে গেল।রুমে ঢুকে বাড়িতে একটা ফোন দিয়ে সবার খোজ খবর নিয়ে নিলাম।বাড়ি যায়নি আজ ৩ মাস হতে চলছে।বাড়ি যাওয়ার প্রহর গুনছি। আবার কবে মায়ের হাতে রান্না খাবো তার স্বপ্নে বিভোর হতে হতে ভূয়ার হাতের রান্না খেয়ে শুয়ে পরলাম ফোন নিয়ে।প্রতিক্ষার প্রহরে রোজকার ব্যস্তময় জীবনের গ্রহন লেগেছে।

মেঘের আড়াল হতে চাঁদের প্রতিক্ষা

এইভাবেই কাটছে দিনগুলো,এক ব্যস্তময় জীবন। খুজতেছিলাম কিছু প্রশান্তি, একটু ছুটি,বাড়ি যাওয়ার সুযোগ। সুযোগ এসেছে বাড়ি যাবার তবে দুঃজনক এক মহামারী আকারে। এখন জীবনের ভয়ে বাড়ি ছুটে যাওয়া। যদিও আক্ষেপ নেই বাড়ি যাচ্ছি বলে আমি খুব খুশি হলাম মনে মনে। দিনের পর দিন যাচ্ছে বাড়ি বসে বসে দেখছি মানুষের মৃত্যুর মিছিল।ধীরে ধীরে সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে, মৃত্যুর মিছিলের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে,এই মিছিলের প্রতি আর খেয়াল নেই।আগে যেরকম একটা কষ্টকর অনুভূতি হতো তাও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।এ যেন খুবই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে নিজের কাছে।হঠাৎ একদিন শরিরের তাপ বাড়তে লাগলো,জানতে পারলাম নিজের ১০৪° জ্বর। কষ্টে,ব্যথায়,চিন্তায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।কবে সুস্থ হবো সেই প্রতিক্ষায় অস্থির হয়ে গেলাম।যে করেই হয় সুস্থ হতে হবে খুব দ্রুত,সহ্য হচ্ছে নাহ এই অসুস্থতা, নিজের জন্যে নিজের ই খুব আফসোস হচ্ছে। উপলব্ধি করতে পারছি যে মানুষ অন্যদিকে শত শত মৃত্যুতে যতটা দুঃখ পায় তারচেয়ে বেশি পায় নিজের অসুস্থতায়। মানুষিক সামাজিক জীব নয় মানুষ ব্যাক্তিগত জীব কেউ একজন বলেছিল তারই উদাহরণ পেলাম আজ।

বাড়ি আসার জন্যে ব্যাকুল মন টাও আবার তার সেই ব্যস্তময় জীবন টাকে খুজছে। সে আবার তার সেই জসিম মামার দোকানে বন্ধুদের সাথে চায়ের কাপে ঝড় তুলার অপেক্ষায় আছে।সিগেরেটের ধোয়ায় সারাদিনের সকল আক্ষেপ,চিন্তা সবকিছু কে ভূলে যাওয়ার দিনগুলোতে ফিরে যেতে চাচ্ছে। প্রহর গুনছি কবে সুস্থ হয়ে উঠবে এই পৃথিবী। কবে মুক্ত বাতাসে আসর জমবে সকলের।সবকিছু ফিরে পাবে তার সেই পরিচিত রুপ। পরিশেষে এট্টুক ই বলার আছে সুস্থ হয়ে উঠো পৃথিবী ছুটি টা যে বড্ড বেশি হয়ে গেছে।


আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমি সচরাচর জীবন সর্ম্পকে নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে লিখতে পছন্দ করি।আজকের লিখাটির মতো উপন্যাস/গল্পের ক্ষেত্রে আমার হাত খুবই কাচা।তাও নতুন কিছু করার ইচ্ছে,নতুন জায়গায় নিজেকে প্রয়োগ করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে চাচ্ছি।জানিনা কেমন হয়েছে,কমেন্টের মাধ্যমে জানালে খুব খুশি হবো।ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। কোনো পরামর্শ থাকলে তাও দিবেন উপকৃত হবো।সময় নিয়ে লিখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।



0
0
0.000
4 comments
avatar

Congratulations @minhajulmredol! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You received more than 2250 upvotes. Your next target is to reach 2500 upvotes.

You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

To support your work, I also upvoted your post!

Do not miss the last post from @hivebuzz:

Hive Power Up Day - The countdown is ticking
Hive Power Up Day - Let's grow together!
0
0
0.000
avatar

আরে ভাই,অনেক ভালো লেখছেন😍। আপনি ছোট গল্প যে এত ভালো লিখতেন তা আমার আগে জানা ছিল না!

0
0
0.000
avatar

আহ! বন্ধু। ধন্যবাদ😊 নতুন কিছু ট্রাই করতেছি আরকি।

0
0
0.000